You are currently viewing পেশা হিসেবে টেকনিক্যাল রাইটিং

পেশা হিসেবে টেকনিক্যাল রাইটিং

পরিচয় পর্ব

আমি মোঃ রাকিব, পেশায় একজন কন্টেন্ট রাইটার (Content Writer)। সহজ ভাষায় বললে, লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহ করি। তবে আমি গল্প বা কবিতা লিখি না, আমি দুইটা সফটওয়্যার কোম্পানির জন্য টেকনিক্যাল রাইটিং (Technical Writing) করি।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে টেকনিক্যাল রাইটিং আবার কি জিনিস? এটা হল, একটা সফটওয়্যার এর বৈশিষ্ট্যগুলো (Features) নিয়ে আলোচনা করা এবং ঐ সফটওয়্যার একজন ব্যবহারকারী কিভাবে ব্যবহার করলে সেরা সার্ভিসটা পাবে সেই নির্দেশনাগুলো দেয়ার জন্য যে কন্টেন্টগুলো লেখা হয় সেটাই টেকনিক্যাল রাইটিংয়ের অংশ। এছাড়াও এইধরনের লেখালেখির মধ্যে আরও অনেক কাজ আছে, কিন্তু আপাতত এটুকু জানলেই চলবে। 

এই পেশায় আপনার আগ্রহ আছে কিনা সেটা কিভাবে বুঝবেন?

এটা বুঝতে হলে আপনার নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে।

১/ আপনি কি পড়তে খুব ভালবাসেন? সেটা হতে পারে বই, ম্যাগাজিন, ব্লগ, সংবাদপত্র, বা অন্যকিছু।

২/ আপনার কি লিখতে ভাল লাগে? কখনো কি গল্প, কবিতা, গান, ছড়া, রচনা, বা অন্যকিছু লিখে মজা পেয়েছেন?

৩/ আপনি কোনো একটা টপিক নিজে বুঝতে পারলে সেটা কি খুব সহজে অন্য কাউকে বোঝাতে পারেন?

যদি এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর “হ্যাঁ” হয়, তাহলে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং পেশার প্রতি ইতিমধ্যেই অল্প একটু হলেও আগ্রহী আছেন। যদি এর মধ্যে কোনোটার উত্তর না হয়, তাহলে যে আপনাকে দিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং হবেনা এমন না কিন্তু, তবে এই অভ্যাসগুলো এই পেশায় ভাল করতে অনেক সাহায্য করে।

এই পেশার জন্য কেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে?

এই পেশায় ভাল করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক নির্দিষ্ট কোনো ডিগ্রীর দরকার পড়েনা, তবে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে বস লেভেলের পারদর্শী হতে হবে। এখানে কোনো গাফেলতি থাকলে আর হবেনা। আর সাথে আপনি যদি ইংরেজি, সাংবাদিকতা, বা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত কোনো বিষয়ে একটা ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করতে পারেন, তাহলে এই পেশায় আপনার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে খুব সহজ হবে।

আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, আমি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী সম্পন্ন করেছি। 

বাংলাতেও লেখালেখি করা সম্ভব, কিন্তু সেক্ষেত্রে খুব বেশি আয় করা সম্ভব না। কারনটা হয়তো এরমধ্যেই বুঝে গেছেন, ইংরেজি হল সারাবিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা, তাই এর পাঠকের সংখ্যা অনেক বেশি।

এই পেশায় সফল হওয়ার জন্য কি কি দক্ষতা থাকা দরকার?

কয়েকটা তো আগেই বললাম। ওগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইংরেজিতে বস হতে হবে, গড়গড় করে ইংরেজিতে কথা না বলতে পারলেও, দ্রুত গতিতে পড়তে এবং লিখতে পাড়তে হবে। আর সাথে যদি ইংরেজিতে কথাও বলতে পারেন, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

এর পাশাপাশি এই পেশায় ভাল করার জন্য যেসব দক্ষতা থাকা আমার কাছে জরুরি বলে মনে হয় সেগুলো হলঃ

  • ধৈর্য্যঃ এটা দরকার কারন একটা কন্টেন্ট লেখার জন্য অনেক সময় নিয়ে গবেষণা করতে হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য, তাই অল্পতে হার মানার অভ্যাস থাকলে চলবে না। 
  • গুগল সার্চঃ গুগলে সব তথ্যই আছে, শুধু লেখার সময়ে কিভাবে বিভিন্ন তথ্য গুগল করে খুঁজে বের করা যায় সেটা শিখতে হবে। 
  • সহজ শব্দের ব্যবহারঃ নিজের লেখার মধ্যে এমন সব শব্দ ব্যবহার করতে হবে যা যেকোনো পাঠক সহজেই বুঝতে পারবে। এই দক্ষতা অর্জনের জন্য নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও এটার অনুশীলন করতে হবে, কথা বলা এবং লেখার সময়। 
  • কৌতূহলী হওয়াঃ যদিও এটাকে ঠিক দক্ষতা বলা যাবেনা, তবে ভাল কন্টেন্ট রাইটার হতে হলে সবসময় নতুন নতুন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। 

এর বাইরেও ছোট ছোট অনেক বিষয় আছে, যা কাজ করতে করতে শেখা সম্ভব।

এই পেশার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং দক্ষতা ব্যবহার করে আর কোন কোন পেশায় কাজ করা সম্ভব?

খুব বিস্তারিত আলোচনা না করে এখানে আমি শুধু একটা লিস্ট শেয়ার করতেছি, যদি এগুলোর মধ্যে কোনো একটা বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে একটু কষ্ট করে গুগল করে নিতে হবে, এতে আপনার দক্ষতাও বাড়বে। 

  • ব্লগিং (Blogging)
  • বই লেখা
  • কপিরাইটিং (Copywriting)
  • ইমেইল মার্কেটিং
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • গবেষণাপত্র লেখা
  • স্ক্রিপ্ট রাইটিং (Script Writing)
  • সাংবাদিকতা
  • অনুবাদক (Translator)

আপাতত এগুলোই মাথায় আসছে, তবে আরও অনেক কিছুই করা সম্ভব। একটা কথা বলে রাখা ভাল, এই কাজগুলো শুধুমাত্র ইংরেজিতে লেখার দক্ষতা থাকলেই করতে পারবেন, সাথে যদি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তাহলে আরও অনেক ক্যারিয়ারের দরজা খুলে যাবে।

ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ

যদি আপনি ভবিষ্যতে কন্টেন্ট রাইটিংয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে আজ থেকেই ইংরেজি চর্চা শুরু করুন। প্রথমে যত বেশি সম্ভব ইংরেজি শব্দ (অর্থসহ) শিখুন, এরপর সেই শব্দগুলো দিয়ে বাক্য বানানোর চর্চা করুন। আর ইংরেজিতে লিখতে থাকুন, প্রতিদিন লিখুন, নিজের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু হয় সেটা নিয়ে লিখুন, এটা করলে একসময় আপনি যে কোনো বিষয়ে ইংরেজিতে লেখালেখি করার দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। 

আপনি নিজেকে ছোট ছোট টার্গেট দিতে পারেন, যেমন আপনি প্রতিদিন নতুন ২ থেকে ৫টা ইংরেজি শব্দ শিখবেন এবং সেই শব্দগুলো দিয়ে একটা করে অর্থপূর্ন বাক্য তৈরি করবেন। এভাবে অনুশীলন করতে থাকলে খুব শীঘ্রই আপনি ইংরেজিতে নিজের উন্নতি অনুভব করতে পারবেন।

অভিভাবকদের জন্য কিছু পরামর্শ

আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য ওদেরকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়াটা খুব জরুরি, বিশেষ করে নিজের ক্যারিয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। ওরা কি করতে পছন্দ করে সেগুলো লক্ষ করুন এবং ওদেরকে গাইড করুন যে ঐ ভাললাগার কাজগুলোকে কিভাবে ওরা নিজেদের ক্যারিয়ার বানাতে পারে। এতে করে সারাজীবন ওরা খুশি মনে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবে। 

প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বিশেষ কিছু প্রতিভা থাকে, এটা একবার খুঁজে বের করতে পারলে ওদের ক্যারিয়ার নিয়ে আর চিন্তা করতে হবেনা। আপনি নিজে এসব বিষয় খুব ভাল না বুঝলে, আপনার সন্তানের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। যেহেতু তারা প্রতিদিন অনেকটা সময় আপনার সন্তানের আশেপাশে থাকে, তাই তাদের থেকে আপনি অনেক তথ্য পাবেন। 

আপনার সন্তান যখন পড়াশুনা শেষে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করবে, তখন সে নিজের পাশাপাশি নিজের পরিবার এবং দেশের সার্বিক অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করতে পারবে। এটার সুফল তার পরবর্তী প্রজন্মও পাবে। এর পাশাপাশি সমাজে আপনাদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। আপনি গর্ব করে নিজের সন্তানের সাফল্যের কথা বলতে পারবেন।

এই গৌরবময় মুহূর্ত কিছু অভিভাবকের জীবনে আসে না কারন তারা খুব অল্প বয়সে নিজেদের সন্তানদের কাজ করতে পাঠিয়ে দেয় বা বিয়ে দিয়ে দেয়। এতে করে ঐ সন্তানদের জীবনের উন্নতি করার সুযোগ তৈরি হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়, যার দুর্ভোগ তাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও পোহাতে হয়।

শিক্ষকদের জন্য কিছু পরামর্শ

একজন শিক্ষক হিসেবে আপনি যেভাবে দৈনন্দিন পাঠদানে কর্মজীবন-সম্পর্কিত শিক্ষাপদ্ধতি সংযুক্ত করতে পারেনঃ 

  • বাস্তব জগতের সাথে সংযোগ স্থাপনঃ শিক্ষকরা একাডেমিক বিষয়বস্তুকে বাস্তব জগতের পেশার সাথে যুক্ত করতে পারেন, যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে তারা যা শিখছে তা বিভিন্ন পেশায় কিভাবে প্রযোজ্য। উদাহরণ, কেস স্টাডি বা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত প্রজেক্ট বানানোর মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে। 
  • কর্মজীবনমুখী দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করুনঃ দলবদ্ধ কাজ, যোগাযোগ, সমস্যা সমাধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তার মতো দক্ষতাকে শ্রেণিকক্ষে কার্যকলাপে অন্তর্ভুক্ত করা। এই দক্ষতাগুলি বেশিরভাগ পেশায় প্রয়োজনীয় এবং ক্লাসে এগুলি অনুশীলন করা শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।
  • বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞদের সাথে সমন্বয় করুনঃ শিক্ষকরা অতিথি বক্তাদের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন, বিভিন্ন পেশাদার প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড ট্রিপের আয়োজন করতে পারেন বা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পেশার সাথে পরিচিত করার জন্য ভার্চুয়াল ট্যুরের আয়োজন করতে পারেন।
  • কৌতূহলকে উৎসাহিত করুনঃ পাঠক্রম বহির্ভূত বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করতে পারেন।
  • কর্মজীবনের নির্দেশিকা প্রদান করুনঃ বিভিন্ন চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার তথ্য সহ বিকল্প অপশন সম্পর্কে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের বিষয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।

শেষ করছি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এটা বলে যে, আপনাদের প্রত্যেকেরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষমতা রয়েছে। আপনার মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমই পারে একটি বৈষম্যহীন ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠন করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে।

মনে রাখবেন, ইতিবাচক পরিবর্তন আপনার থেকেই শুরু হয়। আপনি আপনার আশেপাশে যে পরিবর্তনটা দেখতে চান তা প্রথমে নিজের মধ্যে নিয়ে আসুন। হয়তো আপনাকে দেখেই অনেকে অনুপ্রানিত হবে।

Leave a Reply