You are currently viewing ডাক্তারি পেশা

ডাক্তারি পেশা

আমরা সবাই জীবনে বড় হয়ে কিছু একটা হতে চাই। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পাইলট, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ শিক্ষক হতে চায়, আর কেউ বা আমার মতো ডাক্তার হতে চায়, মানুষকে অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে।

তবে, অনেকেই জানি না, ডাক্তার হতে কী কী দক্ষতা দরকার, কোন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হয়, ডাক্তার হতে কত বছর সময় লাগে, ইত্যাদি। আজকের এই ব্লগে আমি, লামিয়া, এসব প্রশ্নের উত্তর এবং ডাক্তার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। আমি অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী, এবং আমারও লক্ষ্য বড় হয়ে একজন ডাক্তার হওয়া।

ডাক্তার কে?

চিকিৎসক বা ডাক্তার হচ্ছেন সেই পেশার মানুষ, যারা শারীরিক বা মানসিক রোগ, আঘাত বা বিকারের নিরীক্ষণ, নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের সুস্থতার জন্য কাজ করেন। তবে, তাদের এই সেবা প্রদানের জন্য অবশ্যই MBBS ডিগ্রি ও সেবা প্রদানের লাইসেন্স থাকতে হবে।

কীভাবে ডাক্তার হওয়া যায়?

MBBS ডিগ্রি অর্জনের জন্য বাংলাদেশে সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হবে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নির্দিষ্ট নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হলে তবেই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব। নিচে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ন কিছু তথ্য:  

  • SSC (জিপিএ ৫) ও HSC (জিপিএ ৫) পরীক্ষায় মোট জিপিএ ১০ এর মধ্যে কমপক্ষে জিপিএ ৯ পেয়ে পাশ করতে হবে।
  • HSC পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে গ্রেড পয়েন্ট ৪ (৫ এর মধ্যে) পেতে হবে। 
  • HSC ও SSC পরীক্ষায় উপরে উল্লেখিত শর্ত পূরণ করলে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। ১০০ নম্বরের মধ্যে জীববিজ্ঞান ৩০; রসায়ন ২৫; পদার্থবিজ্ঞান ২০; ইংরেজি ১৫; সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ) ১০ নম্বরের MCQ পরীক্ষা দিতে হবে। 

এই তথ্যের আলোকে বলা যায় একজন শিক্ষার্থী ডাক্তার হতে হলে তাকে জীববিজ্ঞান, রসায়ন, ও পদার্থবিজ্ঞানে অনেক পার্দশি হতে হবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে SCC এর জিপিএ-কে ১৫ দিয়ে এবং HSC এর জিপিএ-কে দিয়ে গুণ করে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সাথে যুক্ত করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।  তাই SSC ও HSC পরীক্ষায় সর্বোচ্চ জিপিএ অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে পড়াশুনা করেতে হবে। 

পড়াশুনার পাশাপাশি যে দক্ষতা গুলো এখন থেকেই আমার মত একজন শিক্ষার্থির অর্জন করা উচিত তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো।  

ডাক্তার হওয়ার জন্য নিজের মধ্যে যেসকল দক্ষতা থাকা প্রয়োজন:   

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তথ্য গুলো দেখে বুঝাই যচ্চে একটি মেডিকেল কলেজে চান্স পেতে অনেক প্রস্তুতি দরকার। যার জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয় । এই পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হয় চান্স পাওয়ার পরবর্তি চার বছর।   তাই পরিশ্রম করার এবং মাসিক চাপ সহ্য করতে পারার মতো মানসিকতা নিয়ে এই পেশায় আসা উচিত। 

এর পাশাপাশি একজন ডাক্তার হওয়ার জন্য নিচের দক্ষতাগুলো থাকা প্রয়োজন। 

  • যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills):  নিজের ভাবনা, তথ্য বা অনুভূতি স্পষ্ট ও সহজভাবে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করা এবং অন্যদের কথা বুঝতে পারা হচ্ছে যোগাযোগ দক্ষতা। চিকিৎসকদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রোগীদের সঠিকভাবে বোঝানো এবং তাদের সমস্যা বুঝতে পারা চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এখন থেকেই একজন শিক্ষার্থি অন্যদের সাথে স্পষ্টভাবে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা, শ্রবণ করার ক্ষমতা বাড়ানো এবং নিজের মতামত ও অনুভূতি সহজ ভাষায় প্রকাশ করার চর্চা করতে পারে।

  • সহানুভূতিশীলতা (Empathy): অন্যের অনুভূতি বুঝে তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো চিকিৎসা পেশায় খুবই দরকার। কারণ, রোগীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল থাকে, এবং একজন ডাক্তার সহানুভূতিশীল হলে রোগীদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। 

এখন থেকেই সহানুভূতিশীলতা অর্জন করতে, বন্ধু বা পরিবারের সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তাদের অনুভূতি বুঝতে চেষ্টা করতে হবে, এবং তাদের পাশে থেকে সহানুভূতি প্রকাশ করতে হবে।

  • সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা (Problem Solving Skills): হলো জটিল বা অজানা সমস্যার বিশ্লেষণ করে তার সমাধান খুঁজে বের করার দক্ষতা। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ডাক্তারদের প্রতিদিন রোগীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বিশ্লেষণ করে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দিতে হয়।

এই দক্ষতা অর্জন করতে এখন থেকেই বিভিন্ন সমস্যা চিন্তা করে তা সমাধানের চেষ্টা করা যেতে পারে, যেমন: গণিতের জটিল প্রশ্ন, বিজ্ঞান প্রকল্প, বা জীবনের ছোট ছোট চ্যালেঞ্জের সমাধান খুঁজে বের করা।

  • পেশাদারিত্ব (Professionalism): নিজের কাজ বা পেশার প্রতি দায়িত্বশীল, সৎ, এবং নৈতিক আচরণ বজায় রাখা হচ্ছে পেশাদারিত্ব। চিকিৎসা পেশায় এটি অত্যন্ত জরুরি, কারণ ডাক্তারদের সবসময় রোগীর প্রতি দায়িত্বশীল থাকতে হয় এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও শান্ত ও ধৈর্যশীল আচরণ করতে হয়।

পেশাদারিত্ব গড়ে তুলতে এখন থেকেই নিয়মিত পড়াশোনা করা, সময়মতো কাজ শেষ করা, অন্যদের প্রতি সম্মান দেখানো এবং নিজের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা প্রয়োজন।

  • নেতৃত্ব (Leadership): দল বা ব্যক্তিদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষমতকে নেতৃত্ব বলে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ডাক্তারদের অনেক সময় বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং দলের অন্য সদস্যদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হয়, যা রোগীর চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে সহজ ও কার্যকর করে তোলে।

নেতৃত্বের দক্ষতা এখন থেকেই উন্নয়ন করা যায় অন্যদের সাহায্য করে, দলগত কাজে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চর্চা করে। দায়িত্বশীলতা এবং অন্যদের প্রেরণা জোগানোও নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

  • জীবনব্যাপী শেখা (Lifelong Learning): এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এটি শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে চিকিৎসা পেশায়, যেখানে নতুন গবেষণা, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং প্রযুক্তির উন্নতি প্রতিনিয়ত ঘটে। জীবনব্যাপী শেখার মানে হচ্ছে, একজন ডাক্তার হিসাবে সবসময় নতুন তথ্য এবং উন্নয়ন সম্পর্কে আপডেট থাকা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, এবং কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করা। এছাড়াও, বই পড়া, অনলাইন কোর্স করা এবং সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।

একজন শিক্ষার্থী জীবনের বিভিন্ন স্তরে নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই ও অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে শেখার চেষ্টা করতে পারে। এছাড়াও, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, এবং আলোচনা সেশনে অংশগ্রহণ করে এবং সহপাঠীদের সঙ্গে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করে শেখার অভিজ্ঞতা বাড়াতে পারে।

তুমি যদি ডাক্তার হতে চাও। তাহলে অবশ্যই তুমি এই দক্ষতা গুলো এখন থেকেই চর্চা করতে পারো। 

তোমাদের সবার জন্য শুভকামনা রইলো।

 

[এই লেখাটি সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ আপডেট করা হয়েছে।]

Leave a Reply