You are currently viewing আইনজীবী পেশা নিয়ে আড্ডা

আইনজীবী পেশা নিয়ে আড্ডা

পরিচয় পর্ব

আমার নাম রোকসানা আক্তার আমি অষ্টম শ্রেণী একজন শিক্ষার্থী । আমি অবসর সময় লেখালেখি করতে পছন্দ করি। আমি আজকে আইনি পেশা নিয়ে কিছু লিখবো। কারন আমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে বড় হয়ে একজন আইনজীবী হওয়া এবং সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

আমরা অনেকেই উকিল/আইনজীবী হতে চাই । কিন্তু আমরা জানিনা উকিল হতে হলে কি জ্ঞান, দক্ষতা থাকা বা অর্জন করা প্রয়োজন।  

আজকের লেখাটিতে আমি আইনি পেশায় আগ্রহীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব । আশা করি তুমি এই লেখাটি পড়ে আইনি পেশা নিয়ে বিভিন্ন ধারণা পাবেন। 

(ক) এই পেশায় আপনার আগ্রহ আছে কিনা কিভাবে বুঝবেন? 

আইনি বিষয়ে আগ্রহ আছে কিনা তা বুঝতে হলে, কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে পারেন। 

(১) ধৈর্য ও মনোযোগ : একজন উকিলকে তার মক্কেল , প্রতিপক্ষের উকিল এবং বিচারকের কথা শুনতে ও বুঝতে ধৈর্য ও মনোযোগ দিয়ে থাকেন। । তুমি  কি তোমার পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, সহপাঠি ও প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা সময় মনোযোগ দিয়ে  তাদের কথা শুনতে ও তাদের ধৈর্য সহকারে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পছন্দ করো?  

(২) মৌখিক যোগাযোগ দক্ষতা: একজন আইনজীবীর চমৎকার যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হয়। কারন সে আদালতে অন্য আইনজীবীদের সাথে, জুরি বোর্ডের সামনে তার মক্কেলের অবস্থান স্পষ্ট করে বোঝানোর জন্য সাক্ষীকে ক্রিটিকাল  প্রশ্ন করে, জুরির সাথে তর্ক করে এবং ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করে তাদের হায়ার করার জন্য। তোমার কি বিতর্ক অনুষ্ঠান দেখতে অথবা অংশগ্রহন করতে ভালো লাগে?  নতুন নতুন বিভিন্ন বিষযয়ের পক্ষ-বিপক্ষের আলোচনা শুনতে ও উপস্থাপন করতে ভালোবাসো? শ্রেণিকক্ষে বা খেলার মাঠে বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ হলে তা সমোঝোতা করতে পছন্দ করেন?  

(৩) লেখার দক্ষতা : একজন আইনজীবী অনেকটা সময় কোর্টে আদালতে, মোকদ্দমার জবাব এবং অন্যান্য দলিল ফাইলিং করে । এইসব নথিপত্র দক্ষতার সাথে লেখাতেহয় তাকে। একজন আইনজীবী কার্যকর ভাবে লিখতে পারলে তারক্লায়েন্টের অবস্থান অনেকটাই এগিয়ে যায়। তুমি কি ডাইরি লিখতে পছন্দ করো? প্রতিদিন তুমি যেই মজার মজার কাজ গুলো করো সেই মুহুর্ত গুলো কি তুমি ডাইরিতে লিখে রাখো? 

(৪) বিভিন্ন পরামর্শ দাতার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া : একজন আইনজীবীকেস নিয়ে পরামর্শের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেষার মানুষের সাথে আলোচনা করে ও তাদের পরামর্শ নেয়। । তুমি  কি তোমার পড়ালেখার উন্নতির জন্য তোমার শিক্ষক, সহপাঠী, পিতামাতার  বা তোমারথেকে অভিজ্ঞ এমন কোন ব্যক্তির কাছে থেকে পরামর্শ নিতে পছন্দ করো?

যদি উপরের প্রশ্নগুলোর  উত্তর হ্যাঁ হয় এবং ঐ কাজ গুলো করে তুমি আনন্দ পাও তাহলে তোমার আইনি পড়ালেখা ও আইনি পেষায় আগ্রহ থাকতে পারে।

(খ) উকিল হওয়ার জন্য কি কি শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন? 

উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা (HSC)-এর পর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তোমাকে পাবলিক অথবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হতে হবে। এছাড়াও যেকোনো বিষয়ে স্নাতক  ডিগ্রী অর্জনের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দেশের বিভিন্ন আইন ল-কলেজ সমূহে ভর্তি হতে পারে। ৪ বছরের এলএলবি (অনার্স) অথবা ২ বছরে এলএলপি (পাসকোর্স) করার মাধ্যমে তুমি বার কাউন্সিলের সদস্য পদ লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে।

বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় পাশ করলেই তুমি আইনজীবী হিসেবে তোমার কর্মজীবন শুরু করতে পারবে। জেলা আদালত সমূহ এবং ২ বছর নিম্ন আদালতে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের পর তুমি  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে  এবং পাশ করলে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করার লাইসেন্স লাভ করে। 

(গ) এই পেশাটিতে সফল হওয়ার জন্য কি কি দক্ষতা থাকা প্রয়োজন? 

নিচের দক্ষতা গুলো একজন আইনজীবীর অবশ্যই থাকতে হবে। 

  • যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skill): আপনার মক্কেল বা সাক্ষীদের কাছে থেকে বিভিন্ন তথ্য নেওয়ার জন্য আপনার যোগাযোগ দক্ষতা খুব ভালো হতে হবে ।
  • লেখার দক্ষতা (Writing Skill): আদালতে কেস পেশ করার জন্য তথ্যের প্রয়োজন হয় সেই তথ্যগুলো নোট করার জন্য লেখার দক্ষতা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ । 
  • কথা বলার দক্ষতা (Speaking skill): জর্জ ,প্রতিপক্ষের উকিলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য  সাহসিকতার মাধ্যমে আপনাকে উত্তর দিতে হবে। যার জন্য কথা বলার দক্ষতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই দক্ষতা গুলোর বাইরেও ক্ষেত্র বিশেষে আরও কিছু দক্ষতা থাকতে হয় একজন আইনজীবীর। 

আইনজীবী হওয়ার জন্য এসব যোগ্যতা এবং দক্ষতা গুলো অর্জনের জন্য  তুমি এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারো। 

(ঘ) এই পেশার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং দক্ষতা ব্যবহার করে আর কোন কোন পেশার কাজ করা সম্ভব? 

আইনজীবী পেশার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং দক্ষতা ব্যবহার করে আরো অনেক পেশার কাজ করা সম্ভব । সেগুলো আমি নিচে তুলে ধরেছি :- 

১| মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা (Human Resources Management): কর্মচারীদের নিয়ম-কানুন, নৈতিক-প্রণয়ন, চুক্তি ব্যবস্থাপনা ,এবং শ্রম আইন সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া প্রয়োজন। 

২| পলিসি মেকিং (Police Making): আইনজীবীদের আইন এবং বিধি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান নীতি প্রণয়ন এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নীতির উপর কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৩| মধ্যস্থতা এবং সালিসি(Mediation and Arbitration): সমস্যা সমাধানের  দক্ষতা, আলোচনা করার ক্ষমতা এবং আইনি নীতি সম্পর্কে জ্ঞান এর পেশাও প্রয়োজন। 

৪| গবেষণা (Research): আইন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করা, বিশেষ করে আইনের শিক্ষাক্ষেত্র কাজ করা সম্ভব।

৫| প্রকল্প ব্যবস্থাপনা (Project Management): আইনি দক্ষতা ও নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালনা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এখানে কাজে লাগানো যায়।

৬| কপোরেট কনসালটিং (Corporate consulting): আইনি দিক  থেকে কোম্পানির ঝুঁকি এবং বাধ্যবাধকতা (Compliance ) বিশ্লেষণ এবং সঠিক আইনি পরামর্শ প্রদান করা যায়। 

আইনজীবীদের যোগাযোগ, বিশ্লেষণ, সমস্যা সমাধান, এবং নীতির জ্ঞান বিভিন্ন পেশার কার্যকরী হতে পারে । 

(ঙ) সহপাঠীদের জন্য কিছু পরামর্শ 

যদি তুমি  আইনজীবী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার করতে চাও ,তাহলে ওপরে উল্লেখিত দক্ষতা এবং যোগ্যতা গুলো চর্চা করা শুরু করো  শুধু আইনজীবী না বিভিন্ন পেশার  মানুষের মধ্যে এই দক্ষতা গুলো থাকা প্রয়োজন । তোমারা  যদি তোমাদের একটি সুন্দর ক্যারিয়ার চাও তাহলে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের জন্য  পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কাজে অংশগ্রহণ করো।  

সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এবং শুভকামনা ।

 

[লেখাটি সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে আপডেট করা হয়েছে।]

Leave a Reply