You are currently viewing শিক্ষকতা পেশা

শিক্ষকতা পেশা

আমার নাম নুসরাত জাহান নাবা আমি ৮ম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী। অবসর সময়ে পছন্দ করি লেখালিখি করতে, আজকে লিখবো শিক্ষকতা পেশা নিয়ে।

আমরা অনেকেই শিক্ষক হতে চাই; কিন্তু জানিনা শিক্ষক হতে হলে কি জ্ঞান, দক্ষতা থাকা বা অর্জন করা প্রয়োজন।

আজকে লেখাটিতে আমি শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো । আশা করি এই লেখাটি পড়ে শিক্ষকতা পেশা নিয়ে প্রাথমিক ধারণা পাবেন।

  1. A) এই পেশায় আপনার আগ্রহ আছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?

শিক্ষকতায় আগ্রহ আছে কি না, তা বুঝতে হলে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে পারেন:

  1. জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছা: আপনি কি শিখতে ও অন্যদের শেখাতে পছন্দ করেন? যদি  কোনো বিষয় শিখে অন্যকে তা ব্যাখ্যা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
  2. ধৈর্য: শিক্ষার্থীদের শেখাতে ধৈর্য ও মনোযোগ প্রয়োজন। আপনি কি বিভিন্ন মানুষের সাথে আলোচনার সময়  ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনতে ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে অপেক্ষা করতে পারেন?
  3. যোগাযোগ দক্ষতা: একজন শিক্ষকের জন্য বিষয়গুলোকে পরিষ্কারভাবে বোঝানোর ক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি সহজভাবে জটিল বিষয়গুলো আপনার সহপাঠি বা শিক্ষকের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেন?
  4. নেতৃত্বের দক্ষতা: একজন শিক্ষককে ক্লাস বা শিক্ষার্থীদের পরিচালনা করতে হয়। আপনি কি দলগত কাজে, বিদ্যলয়ের ক্লাবে, ও কমিউনিটির বিভিন্ন কাজে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে পছন্দ করেন?
  5. শিক্ষার্থীদের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি: যখন শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের শেখানো বিষয়টি শিখতে শুরু করে, তখন শিক্ষক তাদের অগ্রগতিতে খুশি হন। আপনিও কি সহপাঠীদের, ক্লাবের সদস্যদের, বা কমিউনিটির লোকজনকে যা শিখিয়েছেন তা তারা সঠিক ভাবে শিখে ব্যাবহার করে তা দেখে খুশি হন?  
  6. শিখতে এবং শিখাতে আগ্রহ: একজন শিক্ষককে তার শিক্ষার্থিদের শেখানোর জন্য ক্রমাগত শিখতে হয়। আপনারও কি  নতুন ধারণা বা পদ্ধতি শিখতে এবং তা অন্যদের শেখাতে ভাল লাগে?

যদি এই প্রশ্নের উত্তর গুলো হ্যাঁ হয়  এবং আপনি এই কাজে আনন্দ পান, তাহলে আপনার শিক্ষকতায় আগ্রহ থাকতে পারে।

  1. B)  শিক্ষক হওয়ার জন্য কি কি শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন?

শিক্ষক হতে হলে শিক্ষার স্তর ও দেশের নীতির উপর ভিত্তি করে শিক্ষাগত যোগ্যতা ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলি প্রয়োজন হয়:

১. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকতা:

  • ডিপ্লোমা বা স্নাতক ডিগ্রি (B.Ed): প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য সাধারণত ব্যাচেলর অব এডুকেশন (B.Ed) ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। এ ডিগ্রি শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং ক্লাসরুম পরিচালনা সম্পর্কিত বিভিন্ন দক্ষতা প্রদান করে।
  • বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রি: কিছু দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নির্দিষ্ট বিষয়ে থাকতে হয়, যেমন বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজি ইত্যাদি।

২. উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ স্তরের শিক্ষকতা:

  • স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (M.Ed বা বিষয়ভিত্তিক): উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজে শিক্ষকতা করতে চাইলে সাধারণত স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। M.Ed ডিগ্রির পাশাপাশি নির্দিষ্ট বিষয়েও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা উচিত।
  • শিক্ষা প্রশিক্ষণ: কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকদের শিক্ষকতা করার আগে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ নিতে হয়, যেমন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করা।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা কি? এটা আমরা অনেকেই জানিনা। চলুন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো জেনে নেই।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা (Teacher Registration Examination) হলো একটি সরকারি বা নির্ধারিত সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত পরীক্ষা, যা কোনো ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে উত্তীর্ণ হতে হয়। নিবন্ধন পরীক্ষা ( Teacher’s Registration Exam ) বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল , কলেজ ,মাদ্রাসা ) গুলোতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য দেওয়া হয় ।নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষকরা সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির যোগ্যতা অর্জন করেন ।  এই চাকরির পর তারা MPO সুবিধা পেতে পারেন।

Monthly Pay Order (MPO) এটি বাংলাদেশে শিক্ষকদের জন্য একটি বেতন প্রদানের সরকারি ব্যবস্থা, যেখানে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে মাসিক ভিত্তিতে প্রদান করে।

নিবন্ধন পরীক্ষা মূলত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (যেমন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠান) শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের জন্য।

পরক্ষার স্তর:

  •  নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় :  ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষকদের জন্য ।
  •  মাধ্যমিক বিদ্যালয়: নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষক ।
  •  উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজ স্তর: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক যারা হতে চান তাদের জন্য। 
  • মাদ্রাসা বা কারিগরি প্রতিষ্ঠান : মাদ্রাসা ও টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ।

নিবন্ধন পরীক্ষা বেসরকারি মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক  ও মাদ্রাসা এবং  কারিগরি  প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যারা হতে চান তাদের জন্য প্রযোজ্য ।

বাংলাদেশে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা

বাংলাদেশে এনটিআরসিএ (NTRCA) বা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এই নিবন্ধন পরীক্ষাটি পরিচালনা করে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া একজন শিক্ষক হিসেবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক।

পরীক্ষার ধরণ

  • লিখিত পরীক্ষা (Written Exam): প্রথম ধাপে একটি লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়, যা সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত থাকে। 
    • সাধারণ জ্ঞান, গণিত, বাংলা, ইংরেজি: এ অংশে সাধারণ জ্ঞান এবং ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়।
    • বিষয়ভিত্তিক: পরীক্ষার্থীর পড়ানো বিষয় অনুযায়ী তার বিষয়ের উপর জ্ঞান যাচাই করা হয়।
  • মৌখিক পরীক্ষা (Viva-Voce): লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়, যেখানে পরীক্ষার্থীর শিক্ষকতা সংক্রান্ত ধারণা ও যোগাযোগ দক্ষতা যাচাই করা হয়। 

পরীক্ষার স্তর

১। স্কুল পর্যায়: 

  • স্কুল (৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী): যারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে চান, তাদের জন্য এই পরীক্ষা।
  • প্রাথমিক (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী): প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য আলাদা নিবন্ধন পরীক্ষা হয়।

২। কলেজ পর্যায়: উচ্চমাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য আলাদা নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হয়।

নিবন্ধন পরীক্ষার গুরুত্ব

  • এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনি একটি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ পাবেন, যা আপনাকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগ্য বলে স্বীকৃতি দিবে।
  • অনেক দেশে সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক।

এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীরা দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পায়।

৩। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষকতা:

  • স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি (Ph.D.): বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হতে হলে সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি ডিগ্রি প্রয়োজন হয়।
  • গবেষণা ও প্রকাশনা: গবেষণা কাজ ও একাডেমিক প্রকাশনা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষকতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

C) এই পেশাটিতে সফল হওয়ার জন্য কি কি দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?

প্রয়োজনীয় দক্ষতা:

  • যোগাযোগ দক্ষতা (Communication) : শিক্ষার্থীদের শেখাতে হলে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা খুব ভালো হতে হবে।
  • ধৈর্য এবং নেতৃত্বের গুণাবলী (Patience & Leadership): শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়ার জন্য ধৈর্য এবং নেতৃত্বের গুণ থাকতে হয়।
  • নিরন্তর শেখার ইচ্ছা (Continuous Learning): শিক্ষকের কাজ শুধুমাত্র শেখানো নয়, বরং নিজের জ্ঞান বাড়ানো এবং শিক্ষাদানের নতুন পদ্ধতি শিখতে ইচ্ছুক হওয়া জরুরি।

শিক্ষক হওয়ার জন্য এসব যোগ্যতা এবং দক্ষতা অর্জন করে আপনি নিজেকে সফল শিক্ষকের পথে নিয়ে যেতে পারবেন।

D) এই পেশার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং দক্ষতা ব্যবহার করে আর কোন কোন পেশায় কাজ করা সম্ভব?

শিক্ষক পেশার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং দক্ষতা ব্যবহার করে আরও অনেক পেশায় কাজ করা সম্ভব। সেগুলোর আমি নিচে তুলে ধরছি:

  • শিক্ষা প্রশাসন (Educational Administration)
  • প্রশিক্ষক (Trainer)
  • শিক্ষা পরামর্শক (Educational Consultant)
  • লেখক বা সম্পাদক (Writer/Editor)
  • মানব সম্পদ (Human Resources)
  • নির্দেশনা ও পরামর্শ (Counseling and Mentoring)
  • অনলাইন শিক্ষা (Online Education)
  • শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা (Educational Research)
  • বক্তা বা পাবলিক স্পিকার (Public Speaker)
  • সামাজিক উন্নয়ন ও সচেতনতা কর্মী (Social Development and Advocacy)

শিক্ষক পেশায় থাকা যোগ্যতা যেমন যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং শিক্ষাদানের পদ্ধতি—এসব দক্ষতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে এসব পেশায় সফল হওয়া সম্ভব।

সহপাঠীদের জন্য কিছু পরামর্শ

তুমি যদি শিক্ষক হতে চাও। তাহলে অবশ্যই তুমি এই দক্ষতা গুলো এখন থেকেই চর্চা করতে পারো। শুধু শিক্ষক না অনেক কিছুতেই এই দক্ষতা গুলো প্রয়োজন হয়। 

তোমাদের সবার জন্য শুভকামনা রইলো। 

তথ্য সূত্র:

  1. শিক্ষক – উইকিপিডিয়া (wikipedia.org)
  2. একজন প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হতে কী কী যোগ্যতা লাগে? – Quora
  3. শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করবেন কীভাবে? (thedailycampus.com)
  4. chatGPT

[লেখাটি সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে আপডেট করার হয়েছে]

Leave a Reply